‘‘হালাল বিকল্প’’
[1]…
...............
বন্ধু ডেনিয়াল আর তার মধ্য আছে বেশ অনন্য রকমের সখ্যতা। মাতৃভাষা ভিন্ন তাই ইংরেজিই তাদের যোগসূত্র। ধর্মে কর্মে সে একজন পাক্কা মুসলিম। তবে... তার মিত্র ডেনিয়াল একজন জন্মসূত্রে খ্রিষ্টান।
জন্মসূত্রে... এই কথার কারণ ! সে প্রকৃতপক্ষে শুধু নামমাত্রই একজন খ্রিষ্টান. ধর্মকর্মের ব্যাপারে সে নির্লিপ্ত...
দুই বন্ধু গল্পের মাঝে প্রহর ভাংছে আর সামনে আগুন, উত্তাপ নেয়ার জন্য। আবদুল্লাহ সাধারণত এতো শীতল পরিবেশের সাথে পরিচিত নয়, যার ফলে হঠাত বলে উঠল...
অহহ ইটস ভেরি কোল্ড হেয়াআআর...
- কি বন্ধু! এতো ঠাণ্ডা লাগছে? এই নাও...
(ইংরেজিতে এই বলতে বলতে একটা বোতল আবদুল্লাহর দিকে এগিয়ে দিল)
- এটা কী বন্ধু? (আবদুল্লাহর প্রশ্ন)
- অহ! ইটস জাস্ট এ বটল অফ ওয়াইম মাই ফ্রেন্ড...
- বন্ধু, আমি মদ পান করি না... করতে পারিও না।
- কিন্তু কেন? আচ্ছা- মদ না খাও বুঝলাম, বাট এখানে টিকে থাকতে তো এটা অপরিহার্য!
- হা হা হা... নো মাই ফ্রেন্ড। আই হেভ সামথিং এল্স...
(এই বলে আবদুল্লাহ তার ব্যাগ থেকে একটি ছোট বোতল বের করে তাকে দেখালো)
ডেনিয়াল
- তুমি জান এটা কি?
- কী এই বোতলে?
-প্রিয় বন্ধু... আমি অবগত ছিলাম এখানের অত্যন্ত শীতল অবস্থা সম্পর্কে। যা দরুন আমি সাথে নিয়ে এসেছি তোমার মদের বিকল্প এই মধু...
বন্ধু ডেনিয়েলকে কিছুটা মধু উত্তপ্ত করে খাওয়ার অফার করলো আবদুল্লাহ নিজেও কিছুটা মুখে দিল। খাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে মুচকি হেসে উঠলো ডেনিয়াল... পড়নে থাকা উপরের অংশের মোটা শীতবস্ত্র টা খুলে একপাশে রেখে দিল।
আবদুল্লাহ এবার কিঞ্চিৎ হাসি সমেত বলল...
বন্ধু ! মদ আমরা মুসলমানের জন্য করা হয়েছে নিষিদ্ধ... তবে আমাদের আল্লাহ এর বিপরীতে দিয়েছেন আমাদের এরচেয়ে উত্তম জিনিস যা মাতলামি ঘটায় না আর তৃপ্তিও দেয় সাথে এই হীম শিতল পরিবেশে তোমার শীতবস্ত্র খুলাতেও এটা সক্ষম...
আল্লাহ সাধারণত আমাদের জন্য কোন কিছু হারাম করে দিলে, তার বিপরীতরূপ হিসেবে রাখেন উত্তম কিছু...
[২]
‘‘...আল্লাহ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন...’’
{আল বাকারা- ২৭৫}
একজন সুদখোর যখন টাকা সুদের বিনিময়ে প্রদান করে আর যখন সে তা পূণরায় সুদ সমেত ফিরত পায়... এই প্রসেস এর মাঝে একটা বিষয় যেটা সাধারণত ঘটে তা হলো, সুদ প্রদানকারী এবং গ্রহনকারীর মধ্যাকার সৃষ্ট অপৃতিকর এবং অসুন্দর ব্যবহার। সমাজে সাধারণত সুদখোরদের মন থেকে কেউ পছন্দ করে না।
অপরপক্ষে- একজন ব্যাবসায়ী যিনি হালাল ব্যাবসায় লিপ্ত, হোক সে ব্যাবসা ছোট অথবা বড়... বিক্রেতা যখন কিছু বিক্রি করে তখন ক্রেতা আর তার মাঝে থাকে হাসিমুখ বিদ্যমান। ব্যাবসায়ী সৎ হলে সমাজ, পরিবার সবার পছন্দ সে লাভ করে... ব্যাবসা দুইজন অপরিচিতকে পরিচিত করিয়ে দেয়।
সুদ যেখানে ভালো সখ্যতাকে ভেঙে দেয়, ব্যাবসা সেখানে দুজন অপরিচিত লোককে পরিচিত বানায় আর গড়ে তুলে সুসম্পর্ক...
আল্লাহ আমাদের ফয়সালা করে দিয়েছেন। আর মহান আল্লাহ বলেন...
‘‘...আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্য উত্তম ফয়সালাকারী কে?’’
{মায়িদাহ – ৫০}
[৩]
হারাম থেকে যারা বিরত থাকতে চায়, তারা কিছু ব্যাপারে উদাসিন থাকতে পারে না। যেমন ধরুন... বিয়ে!
মর্মান্তিক ফিতনার এই কাল... যেখানে সঠিকভাবে দ্বীন পালন করাই হাতের মুঠয় উত্তপ্ত কয়লা ধরে রাখার ন্যায়। একালে আল্লাহর বেধে দেয়া হারাম থেকে বাচতে যে, বিয়ে আবশ্যক হয়ে পড়েছে...
আমাদের সোসাইটি হারাম রিলেশনশীপ চালিয়ে যেতে দেয়, পছন্দ না হলেও পাছে দু-চারটে কথা বলে... এই যা। কিন্তু কে বুঝে কার কথা ... তবুও আমাদের সমাজ রাজি নয় বিয়েকে সহজ করতে। এ নিয়ে বিপাকে তারা পরেছে, যারা নিজের চরিত্র রক্ষা করতে চায়। এ নিয়ে আর বক্তৃতা দিবো না. অবশ্য দোয়া এই... আল্লাহ আমাদের সমাজে হেদায়াত বর্ষণ করুন।
মোট কথা... আল্লাহ আমাদের জন্য কিছু বিষয় হারাম করে দিয়েছেন আর পরিবর্তে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন উত্তম হালাল অসংখ্য পথ।
আমাদের রব বলছেন...
‘‘অতএব, তোমরা উভয়ে (মানুষ ও জিন) তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?’’
‘‘কত পূণ্যময় আপনার পালনকর্তার নাম, যিনি মহিমাময় ও নহানুভব।’’
{আর রাহমান – ৭৭,৭৮}
Comments
Post a Comment